নমষ্কার 🙏🙏🙏
ওঁ তৎ সৎ
সুধি পাঠকবৃন্দ আজ আমরা নিয়মিত ধর্মীয় তথ্য উপস্থাপনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে কথা বলবো । আজকের মূল টপিক হলো - হিন্দুধর্মের মূল শাস্ত্রগ্রন্থ কি ? তার বিষয়বস্তুর সারাংশ দেওয়া কি সম্ভব ?
হিন্দুধর্মের মূল শাস্ত্রগ্রন্থ বেদ ৷ 'বেদ' শব্দের আক্ষরিক অর্থ জ্ঞান ৷ বেদের অন্যান্য প্রচলিত নাম—শ্ৰুতি (যা ব্যক্ত হয়েছে ), আগম (যা ঐতিহ্যরূপে আমাদের কাছে এসেছে ) ও নিগম ( যা জীবনের মূল সমস্যাগুলির স্পষ্ট ও নিশ্চিত সমাধান নির্দেশ করে )। পরমেশ্বরের করুণায় বেদ ঋষিদের স্বজ্ঞার গভীরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্ভাসিত হয়েছিল, তাই বেদকে বলা হয় ‘অপৌরুষেয়' অর্থাৎ এমন কিছু যা মনুষ্যরচিত নয় ৷
এই বেদের সংখ্যা চার। এগুলি হলো : ঋগ্ বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদ ৷
এদের মধ্যে ঋগ্ বেদ প্রাচীনতমরূপে স্বীকৃত ৷ বস্তুতঃ বালগঙ্গাধর তিলক প্রমুখ কয়েকজন মনীষী ঋগবেদেরই মধ্যে প্রাপ্ত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে নির্ণয় করেছেন যে, এটি কমপক্ষে ৮০০০ বছর আগে সঙ্কলিত ৷
ঋগ্ বেদ প্রধানতঃ ঋক্ বা প্রার্থনা মন্ত্রের সংগ্রহ ৷ বেদের মুখ্য আলোচ্য — যজ্ঞসংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান । সামবেদে ঋগ্বেদের কিছু বাছাই করা সূক্তে সুর আরোপ করে কয়েকটি যজ্ঞের বিশেষ বিশেষ পর্যায়ে সেগুলি উদ্গীত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ ( প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আদি উৎস সামবেদের মধ্যেই নিহিত) । অথর্ববেদ হলো প্রধানতঃ নীতিতত্ত্ব এবং তার সঙ্গে আয়ুর্বেদ প্রভৃতি (আয়ুর্বেদ অর্থাৎ স্বাস্থ্য ও আয়ুসম্বন্ধীয় বিজ্ঞান) বিজ্ঞানের কিছু কিছু বিভাগের একত্র সঙ্কলন ৷
পরম্পরা অনুসারে চার বেদের প্রত্যেকটি আবার চারটি অংশে বিভক্ত—মন্ত্র বা সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ্ । সংহিতাগুলি ইন্দ্র, বরুণ, বিষ্ণু প্রভৃতি বিভিন্ন বৈদিক দেবতার উদ্দেশে রচিত প্রার্থনামন্ত্রের সংগ্রহ ৷ ব্রাহ্মণসমূহে রয়েছে বৈদিক যাগ-যজ্ঞের প্রকরণ পদ্ধতির বিবরণ ( এই ‘ব্রাহ্মণ' শব্দটির সঙ্গে ব্রাহ্মণ জাতির কোন সম্পর্ক নেই )। আরণ্যকের মধ্যে আছে অরণ্যে অনুষ্ঠিতব্য যজ্ঞভিত্তিক বিভিন্ন ধ্যানের বর্ণনা ৷ উপনিষদ্গুলি হলো দার্শনিক নিবন্ধ এদের উপজীব্য 'বিশ্ব- ব্রহ্মাণ্ডের অন্তরালবর্তী সত্যবস্তু’, ‘মানুষের প্রকৃত স্বরূপ', ‘জীবনের উদ্দেশ্য ও সেই উদ্দেশ্যসাধনের উপায়' প্রভৃতি বিষয় ৷